শত বছরের ভাসমান নৌকার হাট
মুনওয়ার আলম নির্ঝর
চলছে বর্ষাকাল। চারিদিকে বর্ষার পানিতে টুইটুম্বর। আর এসময় দক্ষিণের মানুষের অন্যতম বাহন হয়ে ওঠে নৌকা। আর সাধারণ মানুষের এই চাহিদার কথা চিন্তা করেই পিরোজপুরের নেছারাবাদে (স্বরূপকাঠী) শত বছরের বেশি সময় ধরেই বসছে নৌকার ভাসমান হাট।
নৌকার হাট ঘুরে দেখা যায় নৌকা ক্রেতা, বিক্রেতার মহামিলনে এ যেন এক নৌকার মেলা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ব্যবসা এলাকার মানুষের কাছে একটি অন্যতম ঐতিহ্য হয়ে গেছে। যা শুধু বেচা-কেনার জন্যই নয়, এই অঞ্চলের মানুষের কাছে একটি পর্যটনেরও বিষয়। নয়নাভিরাম নৌকার পসরা চোখে না দেখলে মনেই হবে না জলে-ডাঙ্গায় এক সঙ্গে এত নৌকার সমারোহ ঘটতে পারে।
পিরোজপুরের কাঠ ব্যাবসা হিসেবে খ্যাত নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ১৩ টি গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার বংশ পরম্পরায় এ পেশা দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে আসছে বলে জানান, উপজেলা ও পার্শবর্তী উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে নৌকার হাটে আসা শতাধিক ক্রেতা-বিক্রেতারা।
পিরোজপুর জেলা ও বরিশাল বিভাগের বিল অঞ্চলের মানুষের কাজে শত বছর ধরে যুগে যুগে নেছারাবাদের সন্ধ্যা নদীর শাখা খালে আটঘরে জলে-ডাঙ্গায় চলে এসেছে এ নয়নাভিরাম নৌকার হাট। সভ্যতার বিকাশে ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও স্টিমারের রাজত্ব থাকলেও প্রতি বছর বর্ষা ঋতুতে এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ও যাবতীয় ছোটখাট ব্যাবসা-বাণিজ্যে কদর বাড়ে নৌকার। তাইতো উপজেলার এই ভাসমান নৌকার হাটে বিভাগের দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতা, বিক্রেতা ও নৌকার হাট দেখার উৎসুখ জনতার ভিড়ে আটঘরে সরগম হয়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দিত নৌ সাম্রাজ্য। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের আটঘরের খালে ও রাস্তার প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসে দক্ষিণ বঙ্গের বৃহত্তম এই নৌকার হাট।
নৌকার বিক্রির সময় সঙ্গে বৈঠা দেওয়া হয়না। তাই আলাদা করে নৌকা কেনার পরে বৈঠা কিনতে হয় বৈঠা ব্যাবসায়ীদের কাছে। ৭৫ টাকা থেকে শুরু করে আকার ও কাঠ অনুযায়ী তিনশ টাকায় বিক্রি হয় একেকটি বৈঠা।
উপজেলার স্বরূপকাঠী এবং মিয়ারহাট ও ইন্দ্রেরহাট থেকে সহজলভ্যে কাঠ কিনে এসকল নৌকা তৈরি করা হয়। উপজেলার শেকেরহাট, দলহার, আতা, কুড়িয়ানা, বেঙ্গুলি ও ডুবিরহাট, একতা, পঞ্চবেকিরসহ এখানকার মানুষেরা নৌকা তৈরিতে পারদর্শী।
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর